Monday, 23 March 2015

ধুমপান ত্যাগের পদ্ধতি





পাশ্চত্যের যে কয়েকটি বদ অভ্যাস প্রাচ্যকে আচ্ছন্ন করেছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে ধূমপান। ধূমপানকে একসময় মনে করা হত স্টাটাস সিম্বল হিসাবে।
অবশ্য ধূমপানের কুফল সর্ম্পকে সচেতন হওয়ার পর পাশ্চাত্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমে এলেও প্রাচ্যে এখনও এই অভ্যাস বিদ্যমান। কিন্তু, এখন আর ধূমপানকে স্টাটাস সিম্বল হিসাবে বিবেচনা করা হয়না।
এখন ধূমপানকে সামাজিক ভাবে গর্হিত কাজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সচেতনতার ফলে অনেকে ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন, আবার অনেকে ছাড়তে চাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না। ধূমপান ছাড়ার জন্য মূল অস্ত্র হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি।
অনেক সময় অভ্যাসের কাছে ইচ্ছাশক্তি পরাভূত হয়। এই ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিছু অভ্যাসের সহয়তায় কিভাবে ধূমপানের মত বাজে অভ্যাসকে চিরতরে বিদায় দেওয়া যায় সে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এ গুলো সঠিক ভাবে মেনে চললে ধূমপান ত্যাগ করা সম্ভব।


সর্বপ্রথমে একটি নোটবুক বা খাতা নিন। ধূমপানের ব্যপারে একটি প্রত্যয়ন রচনা করুন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বর্ণনা করুন। অর্থাৎ কোন ব্রান্ডের সিগারেট খান, দিনে কতটি খান, কখন কখন খান তা লিখুন। পরে কি কি কারনে ধূমপান ছাড়তে চান তা লিখুন।
তারপর প্রত্যয়ন লিখুন, "আমি ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দিতে চাই।'

ধূমপান ত্যাগ:

১. ধূমপান ছাড়ার জন্য বাস্তবে সব সময়ই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ প্রকাশের প্রয়োজন নেই। এ জন্যে ইচ্ছে করাটাই যথেষ্ট।

২. অনেকেই সিগারেট ছাড়ার কথা ভেবে পকেটে সিগারেট রাখেন না। ভাবেন যে, থাকলেই খেতে ইচ্ছা করবে। এরা শুধু বুঝতে পারেন না যে, সাথে না থাকলে খাওয়ার ইচ্ছেটা বেশী হবে। এ ব্যাপারে বাংলাই একটা প্রবাদ আছে, ""ঘরে চাল না থাকলে, সেদিন ক্ষুধা বেশী লাগে।'' পকেটে
সিগারেট না থাকলে দেখা যাবে আপনি অন্যের কাছ থেকে সিগারেট নিচ্ছেন। তাই সিগারেট ম্যাচ পকেটেই রাখুন।

৩. আপনি শুধু খেয়াল রাখুন কখন আপনি সিগারেট ধরান। ধূমপানের ইচ্ছে এক এক জনের মধ্যে এক এক সময় জাগে। কেউ মোবাইলে কথা বলতে বলতে, কেউ টিভি দেখতে দেখতে, কেউ খাবার পরপর, কেউ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে। এ সময়
গুলাতে আপনি নিজের অজান্তেই সিগারেট ধরিয়ে ফেলেন। আপনি শুধু মাত্র অন্য কাজ করার সময় ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। যদি সিগারেট ধরিয়ে ফেলার পর খেয়াল হয় যে, আপনি সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছেন, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাস করুন আপনি সত্যিই এখন সিগারেট খেতে চান কিনা।

৪. যদি সত্যি সত্যিই সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে হয়, তাহলে অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে চুপচাপ আরাম করে বসুন। মনযোগ দিয়ে সিগারেট খান।

৫. সিগারেট খাওয়ার সময় শরীরের প্রতি মনোযোগ দিন। চৌখ বন্ধ করে সিগারেটে টান দিয়ে অবলোকন করুন, সিগারেটের ধোয়া ভিতরে যাচ্ছে। যেতে যেতে তা একটা গোখরা সাপের আকার ধারন করছে। ফুসফুসে গিয়েই ফনা তুলে ছোবল মারছে আর
ঢেলে দিচ্ছে নিকোটিন নামের বিষ। একটা বিষাক্ত সাপ আপনাকে ছোবল মারলে আপনার দেহ-মনে যে অনুভূতি হত তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। সতঃস্ফূর্ত ভাবে সে অনুভূতি না এলে অনুভূতির অভিনয় করুন। (মনে করুন মঞ্চে নাটক করছেন।) মনের
চোখে নাক, মুখ, গলা, হৃৎপিন্ড, পাকস্হলীর প্রতিক্রিয়া ভিজুয়ালাইজ করুন।

৬. পুনরায় সিগারেটে টান দিন। অবলোকন করুন আর একটা গোখরা সাপ ফুসফুসের দিকে যাচ্ছে। পূর্বের প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করুন।

৭. এই পদ্ধতিতে সিগারেট খান এবং আপনার নোট বুক বা খাতাতে সিগারেট খাওয়ার অনুভূতি লিখে রাখুন।

৮. মনে রাখবেন, কখনোই অন্যের সামনে বা অন্য কোন কাজ করতে করতে সিগারেট খাবেন না। যখন সিগারেট খেতে ইচ্ছে করবে অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে নিরিবিলি বসে সিগারেট খাবেন এবং পুরো প্রতিক্রিয়াটি লিখে রাখুন।

৯. অচিরেই দেখবেন আপনার মন ও দেহ নিজ থেকেই সিগারেট প্রত্যাখ্যান করছে।

[ধোয়া জাতীয় ড্রাগে যাদের আসক্তি তারা ও একই প্রক্রিয়া অনুসরন করতে পারেন। মনে রাখবেন, কখনওই কারো সাথে বা কারো সামনে ড্রাগ নিবেন না। নেওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা জাগলে একা নিরিবিলিতে বসে উপরিউক্ত নিয়ম অনুসরণ করুন এবং অনুভূতি গুলো নোট বুকে লিপিবদ্ধ করুন। কিছুদিন পর আপনার শরীরই ড্রাগ প্রত্যাখ্যান করবে।]

সঠিক ভাবে পরামর্শ গুলো অনুসরন করলে অচিরেই এই ভয়ংকর নেশার হাত থেকে মুক্তি পাবেন। সবার সুস্হতা কমনায় আজ এ পর্যন্তই।